বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের। এসবের আসলে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এমন কিছু ভুলের খোঁজ জেনে নেই-
ভুল ১. জন্ডিস হলে তরকারিতে হলুদ দেয়া যাবে না: অনেকের এরকম ভুল ধারণা রয়েছে যে জন্ডিসের রোগীকে হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খেতে দেয়া যাবে না। কারণ এতে রোগীর জন্ডিস বাড়তে পারে। আসল কথা হলো, রক্তে বিলিরুবিন নামক হলুদ পিগমেন্ট বেড়ে যাওয়ার ফলে জন্ডিস দেখা দেয়। কিন্তু এর সঙ্গে খাবার হলুদের কোনো সম্পর্ক নেই। জন্ডিস হলে রোগীদের সাধারণত এমনিতেই খাবারে অরুচি থাকে। তার মধ্যে তেল-মসলা ছাড়া খাবার খেতে দিলে রোগীর খাদ্য গ্রহণে আরও অনীহা দেখা দেয়। তাই জন্ডিস হলে খেয়াল রাখতে হবে, রোগীর খাবার যেন সুস্বাদু হয়।
ভুল ২. নিয়মিত পেঁপে খেলে জন্ডিস হয় না: পেঁপে কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে যেমন উপকারী, তেমনি পাকা ফল হিসেবেও বেশ উপকারী। তবে পেঁপে খাওয়ার সঙ্গে জন্ডিস না হওয়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বিশেষ করে পঁচা- বাসি খাবার এবং দূষিত পানি দ্বারা জন্ডিস সংক্রমিত হয়। সুতরাং পেঁপে খেলে জন্ডিস হবে না এ ধারণাটি ভুল। তবে পেঁপের মধ্যে বিটাক্যারটিন, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’, খনিজ লবণ ও পেপসিন নামক এনজাইম রয়েছে, যা হজমশক্তি ভালো রাখে। তাই কেউ জন্ডিসে আক্রান্ত হলে তাকে পথ্য হিসেবে পেঁপে খেতে দেয়া হয়।
ভুল ৩. টকজাতীয় খাবার খেলে বুদ্ধি কমে: অনেকের মধ্যে এ ভুল ধারণাটি রয়েছে, টকজাতীয় ফলমূল খেলে বুদ্ধি লোপ পায়। টকজাতীয় ফল যেমন-লেবু, আমড়া, করমজা, জলপাই, আমলকী, বরই ইত্যাদি। এ ধরনের ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’, খনিজ লবণ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী। শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া, শারীরিক বুদ্ধি কম হওয়া এসবের জন্য দায়ী অপুষ্টিজনিত সমস্যা। তাছাড়া খনিজ লবণ, জিংক ও আয়োডিনের অভাবে মস্তিস্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই তাদের পছন্দ অনুযায়ী টকজাতীয় খাবার দিতে হবে, যাতে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়। পাশাপাশি সুষম খাদ্য ঠিকমতো দিতে হবে।
ভুল ৪. তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়: টকজাতীয় খাবার সম্পর্কে আর একটি ভুল ধারণা হলো, তেঁতুল খেলে নাকি রক্ত পানি হয়ে যায়। এখনও গ্রাম-গঞ্জে উঠতি বয়সী নারীদের তেঁতুল খেতে নিষেধ করা হয়। সঠিক তথ্য হলো, তেঁতুলের মধ্যে এমন কোনো উপাদান নেই, যা রক্ত পানি করবে বরং তেঁতুলে যথেষ্ট পরিমাণ, খনিজ লবণ, উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়াও প্রোটিন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ইলেকট্রোলাইটসহ অনেক উপাদান রয়েছে তেতুলের মধ্যে।
সুতরাং তেঁতুল খেলে রক্তের পিএইচ কমে পানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া তেঁতুল বা টকজাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাই দেহে বাড়তি মেদ জমতে দেয় না। এতে ওজন ঠিক থাকে, হৃদপিণ্ড ভালো রাখে, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যকৃৎ সুরক্ষায় সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অন্য কিছু না হলেও লেবু বা টক রাখার চেষ্টা করুন।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।